September 26, 2023, 11:33 pm

বিজ্ঞপ্তি:
সর্বশেষ আপডেট জানতে চোখ রাখুন (www.bdvoice.news) বিডি ভয়েসে। যেকোনো প্রয়োজনে যোগাযোগ  করুন-01715653114 "ধন্যবাদ"
সংবাদ শিরোনাম :

banner728x90

বরগুনার রিফাত হত্যা মামলায় স্ত্রী মিন্নিসহ ৬ জনের মৃত্যুদন্ড, খালাস–৪

বরগুনার রিফাত হত্যা মামলায় স্ত্রী মিন্নিসহ ৬ জনের মৃত্যুদন্ড, খালাস–৪

বরগুনার বহুল আলোচিত শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলার রায়ে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির মধ্যে স্ত্রী মিন্নিসহ ৬ জনের মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত।

রায়ে দন্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেকের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। মামলায় আনীত অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় ৪ জনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।
বুধবার দুপুরে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মজিবুল হক কিসলু জানান, মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো, নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি, রাকিবুল হাসান রিফাত ওরফে রিফাত ফরাজী, আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বী আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় ও মো. হাসান।
খালাস পেয়েছে মো. মুসা বন্ড (পলাতক), রাফিউল ইসলাম রাব্বী, মো. সাগর এবং কামরুল ইসলাম সাইমুন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও বরগুনা জেলা দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ভূবন চন্দ্র হালদার জানান, সাক্ষ্য গ্রহণ থেকে শুরু করে সব ধরনের যুক্তিতর্ক ও প্রমাণাদি সফলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা মো. মোজাম্মেল হোসেন কিশোর ফাঁসির আদেশ দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম। কিন্তু মিন্নির প্রতি অবিচার করা হয়েছে। আমরা উচ্চ আদালতে যাব’।
রিফাত হত্যা মামলায় মিন্নিসহ ছয়জনের ফাঁসির রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবং বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু। তিনি বলেন, ‘এ হত্যার মাস্টার মাইন্ড ছিলেন তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। রিফাত হত্যা মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। তাই প্রত্যাশিত রায় পেয়েছি। রায়ে প্রমাণ হলো অপরাধী যেই হোক ছাড় নেই। এই মামলার রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে’।
রিফাত হত্যার দায়ে পুত্রবধূ আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয় আসামিকে মৃত্যুদন্ড দেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রিফাতের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ। তিনি জানান, ‘আমি ও আমার পরিবারের সবাই এ রায়ে অত্যন্ত খুশি হয়েছি। সংশ্লিষ্ট সবাই এ মামলার বিচারকাজ আন্তরিকভাবে করেছেন। সেজন্য আমার ও আমার পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি’।
দন্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামীদের পরিবারের অনুভূতি তাৎক্ষনিকভাবে জানা জায়নি। খালাসপ্রাপ্ত আসামিদের পরিবারের সদস্যরা রায়ে স্বস্তি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
বুধবার,৩০ সেপ্টেম্বর সকালে বাবা মোজাম্মেল হক কিশোরের সঙ্গে নিহত রিফাতের স্ত্রী ও রিফাত হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত ৭ নম্বর আসামি (আইনজীবীর হেয়াজতে থাকা) আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি আদালতে আসে। কারাগারে থাকা ৮ আসামীকে আদালতে হাজির করা হয়। রায়ের সময় মোট ৯ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলো। অন্য আসামী মুছাবন্ড পলাতক রয়েছে।
এ বছরের ১ জানুয়ারি বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালত ১০ আসামির বিরুদ্ধে হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ, হত্যার ষড়যন্ত্র এবং আসামিদের পালাতে সাহায্য করার অভিযোগে চার্জ গঠন করেন। ৮ জানুয়ারি থেকে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মোট ৭৭ জন জনের মধ্যে ৭৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। বাকি একজন বিদেশে থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।
কারাগারে থাকা আসামিরা ছিলো রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর এবং কামরুল ইসলাম সাইমুন। আসামিদের মধ্যে পলাতক মুসা ব্যতীত বাকিরা রিফাত হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজ প্রাঙ্গনে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে (২৫) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, ধারালো দা দিয়ে রিফাতকে একের পর এক কোপ দিতে থাকেন দু’যুবক। ওই সময় রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি দু’যুবককে নিবৃত করার চেষ্টা করেন। ঘটনাটি সিসি ক্যামেরার আওতায় ছিল। গুরুতর আহত অবস্থায় বরিশাল নেয়ার পর রিফাত মারা যায় ।
এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদি হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ২ জুলাই ভোরে জেলা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটা ফেরিঘাট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড (২৫) নিহত হয়। এ মামলায় প্রথমে মিন্নিকে প্রধান সাক্ষি করা হয়েছিল। এরপর আরেকটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ওই ভিডিও দেখে মিন্নির বাবার বিরুদ্ধেও মামলা করার কথা জানান রিফাতের বাবা। এ মামলার তদন্তকারী সদর থানার কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) হুমাউন কবির ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই ভাগে বিভক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরমধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জন রয়েছেন।
অন্যদিকে মামলার প্রধান সাক্ষি মিন্নিকে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই রাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের তদন্তে স্বামী হত্যায় ফেঁসে যায় মিন্নি। পরদিন তাকে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। দ’ুদিন পরে মিন্নিকে আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। আদালতে তার পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। মিন্নির পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী।
পরদিন বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মিন্নি তার স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন। এসপির সংবাদ সম্মেলনের পরদিন বিকেলে মিন্নি একই আদালতে তার স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
গত ৩০ জুলাই বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান মিন্নির জামিন নামঞ্জুর করেন। তারআগে ২১ জুলাই বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালত মিন্নির জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন। এরপর মিন্নির জামিনের বিষয়টি হাইকোর্টে আসে। এ অবস্থায় মিন্নির জামিন কেন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে গত ২০ আগস্ট রুল জারি করে হাইকোর্ট। ২৯ আগস্ট দু’শর্তে মিন্নির জামিন মঞ্জুর করে হাইকোর্ট।
এরপর রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে ৭৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং এক আসামির পক্ষে সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণ করে আদালত। সব আসামির পক্ষে-বিপক্ষে আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। ১৬ সেপ্টেম্বর নিহত রিফাতের স্ত্রী মিন্নিকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য আদালতে উপস্থাপিত যুক্তিখন্ডন শেষে রায়ের এদিন ধার্য করে আদালত।

আপনার মতামত এখানে লিখুন




banner728x90

banner728x90




banner728x90

© বিডি ভয়েস নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY Next Tech
Translate »
error: Content is protected !!