September 25, 2023, 11:26 pm
এই ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র হচ্ছে বাংলাদেশের একমাত্র কেন্দ্র যেখানে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয় এবং একই সাথে শিক্ষার্থীদের বিনোদন ও সহায়তা দেয়া হয়। এখানে আত্ম-পরিচালিত বিভিন্ন কার্যক্রম রয়েছে যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পাঠ্য বহির্ভূত বিভিন্ন কার্যক্রমে যুক্ত হয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে যে, তাদের উপরই বিশ্ববিদ্যালয় তথা দেশের কল্যাণের ভার ন্যস্ত।
কেন্দ্রটির একই ছাদের নিচে রয়েছে ডাইনিং কক্ষ, সভা ও অধিবেশন কক্ষ, খেলাধুলার কক্ষ। রয়েছে লাইব্রেরি ও অধ্যয়নের জায়গা। এছাড়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের জন্য রয়েছে মঞ্চ ও হল। ক্যাম্পাসের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন এর মাধ্যমেই হয়ে থাকে। এসব স্থানেই বন্ধুত্বের গল্পগুলো জমে ওঠে শিক্ষার্থীদের। ফলে কারো মুখ ভার করে থাকার যেন এখানে অধিকার নেই। আড্ডাবাজি আর আনন্দ বিনোদনে জমজমাট থাকে টিএসসি। একেকটা জায়গায় জমে ওঠে জীবনের গল্প।
”টিএসসি’র এক টাকার চা না খেলে দিনটাই অসম্পূর্ণ মনে হয়, বন্ধুরা একেক দিন চা, সিঙ্গারার ট্রিট দেয়। এগুলোই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সবচেয়ে ভাল লাগার, ভালবাসার জায়গা”এমনটাই জানালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মারজানা মারিয়া। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে এমন অনেক বন্ধুদের চা, সিঙ্গারা, সমুচার পার্টি চলতে থাকে
অদূরেই শোনা গেল গান বাজছে ”আজ জন্মদিন তোমার”। একটু এগিয়ে গিয়েই দেখা গেল এক বন্ধুর জন্মদিন পালন করছে কয়েকজন বন্ধু মিলে। কথা বলতেই বোঝা গেল সবাই ভীষণ উচ্ছ্বসিত। তাদের একজনের সাথে কথা বলতেই জানালেন, এভাবেই এখানে তারা তাদের প্রত্যেক বন্ধুর জন্মদিন পালন করেন। প্রতিদিন এমন অনেকের জন্মদিন পালনে সরগরম থাকে টিএসসি প্রাঙ্গন।
গ্রিস দেশের আখড়ায় যেমন আড্ডা হতো দর্শনের, সেখানে চর্চা হতো মনের। এখানেও মনের চর্চা হয়। এখানেও চর্চা হয় দর্শন, শিল্প, সাহিত্য, রাজনীতির। চলে যুক্তি, তক্কো আর গপ্পো। সারা বছর ধরে চলতে থাকে বিভিন্ন শিল্পের প্রদর্শনী এবং বিভিন্ন জার্নালের প্রকাশনী।
রনি, রুন্টি, শীলা, অজয়সহ কয়েকজন বন্ধু মিলে এমনই এক আড্ডায় মেতে উঠেছিল। অজয় জানালেন, প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসের ফাঁকে তারা এমন আড্ডায় মেতে ওঠেন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তারা তাদের ভাবনা, অন্তর্দৃষ্টি একে অন্যের সাথে শেয়ার করেন, গিটার বাজিয়ে গান করেন। রুন্টি জানালেন কয়েকদিন পরেই এখানে তার চিত্রকর্মের প্রদর্শনী হবে। এজন্য তিনি খুব উদ্দীপিত ও উত্তেজিত। এমন নানা সৃষ্টিশীল কর্মকান্ড ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও তার অনুশীলনে কর্মব্যস্ত থাকে টিএসসি প্রাঙ্গন।
এখানে রয়েছে বিভিন্ন সংগঠনের অফিস কক্ষ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম সোসাইটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টুরিস্ট সোসাইটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দাবা ক্লাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্কাউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা কেন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছায় রক্ত দান সংগঠন বাঁধন। এসব সংগঠনে যুক্ত হয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের সুপ্ত মেধা বিকাশের সুুযোগ পায় এবং মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার সুযোগ পায়।
সকাল কিংবা পড়ন্ত বিকেল কিংবা রাত টিএসসি’র যেন বিশ্রাম নেবার ফুসরত নেই। কেননা তার প্রাঙ্গন সবসময় মুখরিত থাকে গল্প, গান আর আড্ডার ফুলঝুড়িতে।
টিএসসি’তে কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীরাই আড্ডা দেন, তা কিন্তু নয়। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও সময় পেলে চলে আসেন তাদের স্মৃতি জড়ানো প্রিয় এই স্থানটিতে। আসেন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও দশনার্থীরাও। তাই কফি হাউজের আড্ডার গানের মতো করে বলতে হয়-কতজন এল গেল, কতজনই আসবে, টিএসসি’ই শুধু থেকে যায় স্বমহিমায়, তার চিরচেনা রুপে হাজারো স্মৃতির নীরব সাক্ষী হয়ে।